আপনি কি কোমড় ব্যাথায় ভুগছেন? আপনার ব্যাথা কি কোমড় থেকে পায়ের দিকে নেমে যায়?

কোমড় ব্যথার জন্য আপনি অনেকগুলো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যার মধ্যে PLID অন্যতম।

PLID কি??? PLID মানে Prolapse Lumbar Inter-vertebral Disc. অর্থাৎ আমাদের পিঠ বা কোমর অনেকগুলো ছোট ছোট হাড় নিয়ে গঠিত, যাকে আমরা কশেরুকা বা ভাট্রিবা বলি!! এই ভাট্রিবাগুলোর মাঝখানে একধরনের কার্টিলেজ থাকে, যাকে আমরা ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বলি। অনেক সময় বিভিন্ন আঘাতজনিত কারনে কিংবা হাড়ের ক্ষয় বৃদ্ধি জনিত কারনে এই ইন্টারভাট্রিবাল ডিস্ক বের হয়ে এসে নার্ভে চাপ দেয়। ফলে কোমরে ব্যথা হয়, অনেক সময় এই ব্যথা পায়ের থোড়ার নিচ পর্যন্ত চলে যায় পা ঝিন ঝিন করে, অবশ অবশ লাগে অনেক সময় এই ব্যথা কোমরে না থেকে পায়ে চলে যায় মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক রোগীর কোমর বাকা হয়ে গেছে অর্থাৎ যেকোন একদিকে সরে গেছে
যদি কারো কোমর বাঁকা ( shift) হয়ে যায়। তবে এই বাঁকা কোমর সোজা না হলে অর্থাৎ শিফট কারেকশন না হলে ব্যথা কখনই ভাল হবে না।।। ফিজওথেরাপিস্টের বিভিন্ন ধরনের ম্যানুয়াল টেকনিক এবং রোগীর পজিশন কারেক্ট করে বাকা কোমর খুব সহজে সোজা করা যায়!!!


কোমর ব্যথার জন্য সারাবিশ্বে জনপ্রিয় চিকিৎসা হল ফিজিওথেরাপি । অনেকেই হঠাৎ করেই সার্জারির মত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নে একটা নিয়ম আছে, কোমর ব্যথার সার্জারির আগে অবশ্যই একজন মাস্কুলোস্কেলেটাল বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টদের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। অর্থাৎ উনি এসেসমেন্ট বা ফিজিওথেরাপি দিয়ে দেখছেন, রোগী ফিজিওথেরাপি দিয়ে ভাল হবে না। সার্জন তখন চিন্তা করবে, তার সার্জারি লাগবে কি না!l আমি মনে করি আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও সার্জারির করার আগে অবশ্যই একাধিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে লিখিত পরামর্শ নিন। অনেকে ফিজিওথেরাপি মানে ইলেক্ট্রোথেরাপিকে বুঝে!! ফিজিওথেরাপি মানেই শুধুই হিট, তাপ, কারেন্ট না। ফিজিওথেরাপি অনেক বড় এবং অত্যাধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা। একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের হাতই আপনাকে অপারেশন ছাড়া PLID এর সমস্যা থেকে মুক্ত করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কনসেপ্ট যেমন McKenzie, Mulligan, Cyriax খুব ভাল কাজ করে! সোজা কথা একজন ভাল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করালে PLID জনিত কোমর ব্যথা ভাল হওয়া কোন ব্যাপারই না।। রোগনির্ণয় • কোমরের কিছু পরীক্ষা রয়েছে। ফরোয়ার্ড বেন্ডিং পরীক্ষা, ব্যাকওয়ার্ড বেন্ডিং পরীক্ষা। • নিউরোলজিক্যাল ডিফিসিয়েন্সি আছে কি না, তা নির্ণয় করা হয়। • কোমরের এক্স-রে এবং এমআরআই করতে হবে। • রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা হয়। ক্যালসিয়ামের পরীক্ষা, ইউরিক এসিডের পরিমাণ, শরীরে Arthritis/বাত আছে কি না, এসব পরীক্ষা করতে হয়। • ক্রনিক ব্যাক পেনের ক্ষেত্রে এইচএলএ-বি ২৭ (HLA-B27) পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। কোমর ব্যথার লক্ষন সমূহঃ কোমরের ব্যথা আস্তে আস্তে বাড়তে পারে বা হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। নড়াচড়া বা কাজকর্মে ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। ব্যথা কোমরে থাকতে পারে বা কোমর থেকে পায়ের দিকে নামতে পারে অথবা পা থেকে কোমর পর্যন্ত উঠতে পারে। অনেক সময় কোমর থেকে ব্যথা মেরুদণ্ডের পেছন দিক দিয়ে মাথা পর্যন্ত উঠতে পারে। রোগী অনেকক্ষণ বসতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। ব্যথার সঙ্গে পায়ে শিন-শিন বা ঝিন-ঝিন জাতীয় ব্যথা নামতে বা উঠতে পারে, হাঁটতে গেলে পা খিচে আসে বা আটকে যেতে পারে, ব্যথা দুই পায়ে বা যেকোন এক পায়ে নামতে পারে। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকলে ব্যথা কিছুটা কমে আসে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে রোগীর কোমর ও পায়ের মাংসপেশীর ক্ষমতা কমে আসে এবং শুকিয়ে যেতে পারে, সর্বোপরি রোগী চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। দৈনন্দিন কাজে সতর্কতাঃ নিচ থেকে কিছু তোলার সময়- *কোমর ভাঁজ করে কিংবা ঝুঁকে তুলবেন না। হাঁটু ভাঁজ করে তুলুন। *কোনো কিছু বহন করার সময় ঘাড়ের ওপর কিছু তুলবেন না। *পিঠের ওপর ভারি কিছু বহন করার সময় সামনের দিকে ঝুঁকে বহন করা পরিহার করুন। শোয়ার সময় *উপুড় হয়ে শোবেন না। ভাঙ্গা খাট, ফোম বা স্প্রিংয়ের খাটে শোবেন না। *সমান তোশক ব্যবহার করুন। *বিছানা শক্ত, চওড়া ও সমান হতে হবে (শক্ত বিছানা বলতে সমান কিছুর ওপর পাতলা তোশক বিছানোকে বোঝায়) দাঁড়িয়ে থাকার সময় *১০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকবেন না। *হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। *দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে বা দাঁড়াতে হলে উঁচু হিল পরবেন না। *অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হলে কিছুক্ষণ পর পর শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে নিন। *দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে অল্প সময়ের জন্য বসে ফুট রেস্ট নিন। বসে থাকার সময় *আপনার চেয়ারটি টেবিল থেকে বেশি দূরে নেবেন না। *সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। *কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন। *এমনভাবে বসুন যাতে ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে। *নরম গদি বা স্প্রিংযুক্ত সোফা বা চেয়ারে বসবেন না। যানবাহনে চড়ার সময় *গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে বসবেন না। সোজা হয়ে বসুন। *ভ্রমণে ব্যথার সময় লাম্বার করসেট ব্যবহার করুন। কোমর ব্যথা বেশি হলে বিছানা থেকে শোয়া ও ওঠার নিয়ম *চিৎ হয়ে শুয়ে এক হাঁটু ভাঁজ করুন। *এবার অন্য হাঁটুটি ভাঁজ করুন। হাত দুটি বিছানায় রাখুন। *এবার ধীরে ধীরে এক পাশ কাত হোন। *পা দু’টি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, এবার কাত হওয়া দিকের হাতের কনুই এবং অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসুন। *দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে বসুন এবং মেঝেতে পা রাখুন। *এবার দুই হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দাঁড়ান। মেয়েরা যেসব নিয়মকানুন মেনে চলবেন *হিল জুতা ব্যবহার পরিহার করুন। চপ্পল/স্যান্ডেল পরার অভ্যেস করুন *তরকারি কাটা, মসলা পেষা, কাপড় কাচা ও ঘর মোছার সময় মেরুদন্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখুন। *কোমর ঝুঁকে বাচ্চাকে কোলে নেবেন না। ঝাড়ু দেয়া, টিউবওয়েল চাপার সময় কোমর সোজা রাখবেন। *মার্কেটিং বা শপিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দাঁড়ানো বা হাঁটার পরে বিশ্রামের জন্য একটু বসবেন। *বিছানা গোছানোর সময় কোমর ভাঁজ না করে বরং হাঁটু ভেঙে বসা উচিত। *ওজন কমান, খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন গরু, খাসির মাংস, ডালজাতীয় খাবার, মিষ্টিজাতীয় খাবার, তৈলাক্ত খাবার খাদ্য তালিকা থেকে কমিয়ে শাকসবজি, তরিতরকারি, ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখুন। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং যাদের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস আছে, তা বন্ধ করে রাতে শিগগিরই শুয়ে পড়ুন। কোমর ব্যথার আধুনিক চিকিৎসা অনেকেই কোমর ব্যথা হলে বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এটা সঠিক সমাধান নয়।কোমর ব্যথা বা ডিস্ক প্রলাপ্সের বেশীর ভাগ রোগীই ফিজিওথেরাপি, ম্যানুয়াল থেরাপি ও আধুনিক ইনভার্সন থেরাপির মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে। ডিস্ক প্রলাপ্স হলে ৪-৬ সপ্তাহ চিকিৎসা নিলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। পরে রোগীকে চিকিৎসকের র্নিদেশমত ব্যায়াম ৩ থেকে ৬ মাস চালিয়ে যেতে হয়। ঘরোয়া চিকিৎসা * ১৫ মিনিট গরম পানির সেক দিতে হবে *নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়ামঃ
নিচের চিত্রের মত করে বাসায় ব্যায়াম করতে পারেন,এতে করে অনেকটা ভাল বোধ করবেন
প্রতিটি ব্যায়াম ৫-১০ বার করে করবেন। স্ট্রেচ বা টান অবস্থায় ১৫-২০ সেকেন্ড ধরে রাখবেন। মাঝখানে বিরতি দিয়ে করবেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন।








এক্সারসাইজ গুলো করার সময় কোন সমস্যা হলে বা বুঝতে না পারলে, ওয়েবসাইটের নিচের দিকে ম্যাসেজ অপশন এ ক্লিক করে আমাদের পরামর্শ নিতে পারেন

সবচেয়ে ভাল হয় আপনি অতি দ্রুত একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করুন।

সামিয়া জান্নাত সিনথিয়া,
২৮ তম ব্যাচ, (জিবি)
ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি
Previous Post Next Post