কেন এন্টিবায়োটিকঃ জীবন রক্ষার্থে নাকি হারাতে?

এই পোস্টের মাধ্যমে যে যে বিষয়ে উপকৃত হবেনঃ 
  •  এন্টিবায়োটিক কি?
  •  এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সতর্কতাসমূহ?
  •  এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কি?
  •  এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর প্রধান কারণসমূহ?
  • এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধের উপায়?
  •  এন্টিবায়োটিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ?

এন্টিবায়োটিক কি?

এন্টিবায়োটিক হল এমন উপাদান যা ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস থেকে সংগ্রহ করে অন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসকে ধ্বংস করার জন্য বা তার বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

অর্থাৎ মানুষ এবং পশুপাখির ব্যাকটেরিয়া গঠিত সংক্রামক রোগ হলে, সেই সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং তা থেকে প্রতিকার পেতেই এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়।

এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের সতর্কতাসমূহঃ

আমাদের দেশে এন্টিবায়োটিক এর যথেচ্ছ ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার হওয়া উচিত পরিমিত, সীমিত ও শুধুমাত্র প্রয়োজনে।

অথচ আমরা সর্দি, কাশি ও জ্বরের মত সাধারন রোগের ক্ষেত্রেও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এন্টিবায়োটিক সেবন করে থাকি, যা একদমই উচিত নয়। এতে করে অনেক সময় সাময়িক ভাবে রোগ সেরে গেলেও রোগীকে পরবর্তিতে ঐ রোগের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভোগতে হয়।

এন্টিবায়োটিক এর যথার্থ ব্যবহার না করাতে আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার মাঝে এন্টিবায়োটিক রোধি বা এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে।

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কি?

এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলা হয়, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরুপ।
এই ক্ষেত্রে ঔষধ খেয়েও ভাল ফল পাওয়া যায় না।কারন জীবানুর বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক আর কাজ করতে পারে না।

যদি পশুপাখি অথবা মানুষের দেহে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয় এবং সেই সকল এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া দ্বারা মানুষ বা পশুপাখি আক্রান্ত হওয়ার ফলে যে রোগ হয় তা ভাল হতে তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি সময় লাগে।
যার ফল স্বরুপ দিন দিন অনেক চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধিসহ দীর্ঘ দিন হাসপাতালে অবস্থান এবং মৃত্যু হারও অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর কারনসমুহঃ

★ অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হলে।
★রোগীর চিকিৎসা কোর্স কমপ্লিট না করে এন্টিবায়োটিক সেবন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বন্ধ করা হলে।
★মৎস ও পশুপাখি পালনে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে।
★স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ঘাটতি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে।

এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের  উপায়ঃ

★শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা।
★ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাধারন রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা।
★ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ ও সময় অনুসারে এন্টিবায়োটিক সেবন করা।

★ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে কিছু ভাল অভ্যাস গড়ে তুলা। যেমন:

*নিয়মিত হাত ধোয়া।
*স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করা।
* ছোয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগীর সাথে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে না যাওয়া ইত্যাদি।

★যথার্থ সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সেক্সুয়াল কার্যে লিপ্ত হওয়া।
★পশুপাখির গ্রোথ এর জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করা এবং সেই সকল পশুপাখি আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে ত্যাগ করা।

সাধারন পরামর্শঃ

চলুন আমরা নিজেরা এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে সচেতন হই এবং সচেতনতা তৈরি করি। যদি এখন থেকে আমরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সচেতন না হই এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধে উদ্যোগ না নেই, তবে আমাদের আবার এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পূর্বের মত অবস্থা তৈরি হবে। যখন কিনা মানুষ ও পশুপাখি সাধারন ইনফেকশন, সাধারন ইনজুরিতেও মারা যেত।
দিন দিন এন্টিবায়োটিক কার্যকারীতা হারানোর মাধ্যমে আমরা সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছি।

অনুরোধ থাকবে, সাধারন রোগে বা না জেনে না বুঝে এন্টিবায়োটিক খাবেন না। আপনারা সুস্থ্য থাকুন, ভাল থাকুন এটাই আমাদের কাম্য।

এরকম আরো পোস্ট পড়তে চান? ক্লিক করুন এখানে। ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেজে।
Previous Post Next Post