হাটু ব্যথার কারন, চিকিৎসা ও প্রতিকার

হাটু ব্যথার সমস্যা আজকাল প্রকট আকার ধারন করেছে। আমাদের বয়স চল্লিশের উপরে হলে যেমন চুল পেকে যায়, এ রকম বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়েরও ক্ষয় হতে থাকে। হাড় ক্ষয় হওয়ার যে মূল কারণ, যাকে আমরা অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলি, বেশির ভাগ রোগী ই এ কারণে হাঁটু ব্যথা নিয়ে আসে, বিশেষ করে বয়স বেড়ে গেলে। এই সমস্যা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশী হয়। মহিলাদের বয়স ৪৫ পার হলে এর প্রকোপ বাড়ে।
যেসব কারনে হাটু ব্যথা হতে পারেঃ
  •  অষ্টিও আর্থাইটিস বা বাত।
  • হাটুতে আঘাত পেলে।
  • অষ্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় এর কারনে।
  • কন্ড্রো-মেলাসিয়া পেটেলা হলে।
  • টেন্ডিনাইটিস।
  • লিগামেন্ট ও মেনিস্কাস ইনজুরির কারনে।
  • মাংশ পেশীর সমস্যা হলে।
হাটু ব্যথার চিকিৎসাঃ
  • যদি হাটু ফোলা থাকে তাহলে সর্ব প্রথম ফোলা কমানো। হাটুর ভিতর থেকে ইনফ্লামেটরি ফ্লুইড বের করে অথবা রেষ্ট এবং ঔষধ এর মাধ্যমে ফোলা কমানো।
  • যদি হাটুর তাপমাত্রা বেশী থাকে তাহলে বরফ ও তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকলে গরম শেক দিতে হবে।
  • ডিপ ফ্রিকশন ও মায়োফেসিয়াল রিলিজ টেকনিক - যা হাটুর উপর ও নিচের মাংশ পেশী ও লিগামেন্ট কে নরম করে যার ফলে ব্যাথা কমে।
  • ষ্ট্রেচিং ও স্ট্রেংদেনিং এক্সার সাইজ - হাটুর শক্তি ও রেঞ্জ অব মুভমেন্ট বৃদ্ধি করে।
  • যেহেতু এ রোগের প্রধান কারণ ক্ষয়জনিত সমস্যা তাই এর প্রধান চিকিৎসা হাড় ক্ষয় বন্ধ করার থেরাপি দিতে হবে। এ সকল থেরাপি আধুনিক ও নিরাপদ। এ সময় এমন কি সারা জীবন রোগিকে কিছু উপদেশ মানতে হয়। যেমন ডায়াবেটিস থাকলে নিয়ন্ত্রনে রাখা, শরীরের ওজন কমানো, উচু কমোড এর পায়খানা ব্যবহার করা, হাটু গেড়ে না বসা, নিয়মিত চিকিৎসকের নির্দেশিত ব্যায়াম করা।
হাঁটু ফোলা থাকলে হাটা হাটি কম করে পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন এবং চিকিৎসকের সরণাপন্ন হোন।
হাটুর মাংসের শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম(স্ট্রেংদেনিং এক্সারসাইজ)

হাটুর ব্যথা প্রতিরোধ করার সহজ উপায়ঃ

১. নিয়মত হাটুন।
২. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৩. পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল্স ও আশঁ যুক্ত খাবার খান।
নিয়মত হালকা ব্যায়াম ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে হাঁটু ব্যাথা নিরাময় করে সুস্থ থাকুন।।
৪.সঠিক খাবার খান : যা খাচ্ছেন তার প্রভাব সরাসরি দেহে প্রভাব ফেলে।
পুষ্টিকর খাবার শক্তিশালী হাঁটু তৈরি করে। তাই পুষ্টিকর খাবার খান।
৫. ভিটামিন ডি : যেকোনো বয়সে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি দারুণ শক্তিশালী হাড় গঠন করে। ভিটামিন ডি এর অভাবের সঙ্গে অস্টিও পোরোসিসের সম্পর্ক রয়েছে। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তার পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।
৬. হাই হিল জুতা ত্যাগ করুন : হাই হিল জুতা দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় এটি পরে থাকলে হাঁটুসহ দেহের বিভিন্ন অংশে ব্যথার সৃষ্টি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল নারী হাই হিল জুতা পরেন তারা হাঁটুর ব্যথায় ভোগেন।
৭. ওজন কমাতে হবে : দেহের ওজন বহন করে দুই পা। কাজেই সর্বশেষ চাপটা এসে হাঁটুতেই পড়ে। তাই ওপরের অংশের ওজন যদি বেড়ে যায় তবে হাঁটুতে ব্যথা হতেই পারে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ওজন কমাতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠুন ..
৯. ফিজিও থেরাপি  পরামর্শ : অনেক সময় অস্টিওোপরোসিস হয়ে যায়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে তা আড়ালেই থেকে যায়। তাই একজন ফিজিও থেরাপি চিকিৎসকের অধীনে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

তিন ধরনের ব্যায়ামের মাধ্যমে হাটুর ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেনঃ

১. একটি ব্যায়াম হলো ওয়াল স্লাইড। দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে দেয়ালে চাপ দিতে থাকুন। পিঠ ঠেকিয়ে ধীরে ধীরে দেয়াল ঘেঁষে নামুন। হাঁটু ভাঁজ করে বসা অবস্থায় কিছুক্ষণ থাকুন। আবার মেরুদণ্ডে চাপ বজায় রেখে উঠে দাঁড়ান।
ওয়াল স্লাইড এক্সারসাইজ

২. আরেকটি কার্যকর ব্যায়াম হলো শর্ট আর্ক কোয়াড। একটি মোটা তোয়ালে গোল করে পাকিয়ে নিন। এর পরও হাঁটুর অংশটি রেখে মেঝেতে পিঠ ঠেকিয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার একটি পা হাঁটু মুড়ে উঁচু করুন। কিছুক্ষণ রেখে পা নামিয়ে নিন। এবার অপর পা একইভাবে ভাঁজ করুন ও নামিয়ে নিন।
শর্ট আর্ক কোযাড

৩. ব্রিজ হাঁটুর পশ্চাতভাগের হ্যামস্ট্রিং ও নিতম্বের হাড়কে শক্ত করে। মেঝেতে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার পা ও হাতের শক্তিতে কোমর ওপরের দিকে তুলুন। আবার নেমে আসুন।
পেলভিক ব্রীজ এক্সারসাইজ

মনে রাখবেন, ব্যায়ামের সময় হাঁটু বা অন্যান্য হাড়ে খুব বেশি চাপ ফেলবেন না। দৌড়ানো, সাঁতার, ট্রেডমিল বা ব্রিস্ক ওয়াকিংয়ের সময় সাবধান থাকবেন। ব্যায়ামের সময় শরীরে যেন পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। পরিমান মত পানি পান করবেন।


Previous Post Next Post