মাংসপেশির টান (পরিচিত নাম রগে টান পরা) কী, কি কারনে হয়, কি কি লক্ষন বা উপসর্গ দেখা যায়, প্রতিকারের উপায় কী??

মাংসপেশির টানঃ
মাংসপেশির টান ( Muscle Cramp), ডাক্তারী ভাষায় এটি ‘মাসল পুল’, ‘স্ট্রেইন’, ‘মাসল স্পাজম’, ‘ক্র্যাম্প’ ইত্যাদি নামে পরিচিত। অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে এটি সাধারণত অনেক বেশি হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষের কাছে এটি রগে টান পরা বা খিল ধরা নামে বেশি পরিচিত।
মাংসপেশির তীব্র, ব্যথাপূর্ণ সংকোচন কিংবা শক্ত হয়ে যাওয়াকে মাংসপেশির টান বলে। এটি হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। সচারাচর এটা পায়ের পেশিতে বেশি হয়। অনেকের রাতে ঘুমের মধ্যে মাংসপেশিতে টান ধরে, একে বলে ‘নাইট টাইম লেগ ক্র্যাম্পস’। এ ক্ষেত্রে সাধারণত হঠাৎ করে পায়ের কাফ মাসলে (হাটুর নীচে পিছনের অংশ) সংকোচন শুরু হয় এবং পেশি শক্ত হয়ে যায়। যখন তীব্র ব্যথায় ঘুম ভেঙে যায়।
মাংসপেশিতে টান পড়ার কারনে মাংস গুচ্ছাকার ধারন করেছে।

কারণঃ (যে সকল কারনে মাংসপেশিতে টান পরে)
  • শরীরের যেকোনো একটি মাংসপেশি অনেকক্ষণ ধরে ব্যবহৃত হলে।
  • আকস্মিক নড়াচড়া, ভারি কিছু উঠানোর সময় বেকায়দায় কোনো পেশিতে টান পড়লে।
  • দুশ্চিন্তা থেকেও মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
  • খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা হলে, যেমন পানি কম খাওয়া, শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব ইত্যাদি কারণেও মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে।
  • দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারে কিংবা চেয়ারে বসে কাজ করলে।
  • লম্বা সময় যানবাহন চালালে কাঁধ, ঘাড়, পিঠের মাংসপেশিতে টান পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাছাড়া খেলোয়াড়দের হাত ও পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ার ঝুঁকি থাকে।
  • নিয়ম না মেনে ব্যায়াম, আঘাত কিংবা মাংসপেশির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে।
  • গর্ভাবস্থায় কিছু খনিজ কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে, যেমন—ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের মাসগুলোতে।
  • ঠান্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসা, বিশেষ করে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসলে।
  • দীর্ঘ সময় কোনো শুষ্ক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা দীর্ঘ সময় এক জায়গায় বসে থাকা অথবা ঘুমের মধ্যে বেকায়দা ভঙ্গিতে পা রাখা।
  • পর্যাপ্ত পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম বা অন্যান্য খনিজ গ্রহণ না করা, অর্থাৎ রক্তে এদের ঘাটতি থাকা।
  • পানিস্বল্পতার কারনে।
  • কিছু বদভ্যাসের কারণে, যেমন: ধূমপান, মদপান করলেও এমন হতে পারে
লক্ষন বা উপসর্গঃ (কিভাবে বুঝতে পারবেন??)
আঘাত কতটুকু, তার ওপর নির্ভর করে উপসর্গ।
  • আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় ব্যথা অনুভব হবে।
  • ফুলে যাওয়া, লালচে ভাব।
  • মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • নড়াচড়া করলে ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া।
কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়??
  • সব সময়, বিশেষ করে খেলা বা দৌড়ানোর সময় সঠিক জুতা সঠিকভাবে পরতে হবে।
  • ব্যায়াম বা দৌড়ানো বা কোনো কাজ শুরুর আগে ওয়ার্মআপ ও কুলডাউন ব্যায়াম করতে হবে।
  • নিয়মিত ওজন তোলা, স্ট্রেচিং ইত্যাদি ব্যায়ামের মাধ্যমে পেশিকে নমনীয় ও শক্ত রাখতে হবে।
  • ব্যায়াম, খেলা বা অন্য কাজ ধীরগতিতে শুরু করে পর্যায় ক্রমে কাজের গতি বাড়াতে হবে।
  • যারা বসে কাজ করেন কিংবা গাড়ি চালান তারা সময় পেলেই হাত -পা নড়াচড়া (movement)  করবেন।
  • যত বেশি সম্ভব পানি পান করবেন।
  • ঘুমানোর সময় সঠিক নিয়ম মেনে ঘুমাবেন।
  • নেশা জাতীয় সকল খাদ্য থেকে দূরে থাকুন।
(নিয়মিত ফিজিওথেরাপি পরামর্শ নিন সুস্থ থাকুন) 
আরো ভাল ভাল পোস্ট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।
Previous Post Next Post